মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫১ অপরাহ্ন
শফিকুল ইসলাম খোকন॥ উপরে নীল আকাশ, নিচে চারপাশে জলরাশি আর মাঝখানে প্রকৃতি সাজিয়েছে অপরূপে একটি দ্বীপ যার নাম ‘বিহঙ্গ দ্বীপ’। সবুজে ঘেরা এ দ্বীপটির একদিকে রয়েছে ধু-ধু বালুচর, অন্যদিকে শীতল বালু। যেখানে প্রকৃতি এঁকে রাখে বিভিন্ন ধরনের ফুল। রয়েছে ঢেউয়ের গর্জন আর সূর্যাস্ত। পাখির কিচিরমিচির আর হরিণের ছোটাছুটি তো আছেই। কাঁকড়া, শামুকের অবাধ ছোটাছুটি আর বিভিন্ন পাখির কলকাকলি মুহূর্তেই মুগ্ধ করে দেয় যে কাউকে।
ধুলোময় আর ইট পাথরের শহরের বাতাসের বদলে প্রকৃতির সান্নিধ্যে সমৃদ্ধির নিশ্বাস নেয়ার সুযোগ রয়েছে এ দ্বীপে। এখানেও শব্দ আসবে কানে, তবে তা দূষিত শব্দের মতো বিরক্তিকর নয়। সাগরের মায়াবী গর্জন, বলেশ্বর নদের পানি চিকচিক আলোও দেখা যাবে। হাজারো প্রজাতির বৃক্ষ সমৃদ্ধ চিরসবুজ বন ভূমিতে পাখিদের অবাধ বিচরণ মন আর চোখ দুটোকেই শীতল করে দেবে। দ্বীপের চারপাশ হেঁটে যেতে যেতে অনুভূত হবে এ যেন প্রকৃতির এক মায়াবী সান্নিধ্য।
এমন প্রকৃতি আর প্রশান্তির সন্ধান দেবে বরগুনার পাথরঘাটার বিহঙ্গ দ্বীপ। এখানে সামুদ্রিক কাঁকড়ার আলপনা অবাক ও বিমোহিত করবে। শিল্পী আলপনা আঁকেন কলা-কৌশলের মাধ্যমে। কিন্তু কাঁকড়া কোথা থেকে এ আলপনা শিখলো যার হিসাব মেলাতে পারবে না কেউ। যারা বন ভালোবাসেন, প্রকৃতিকে আপন করে নেন। যারা খুব অল্পতেই ক্লান্ত হওয়ার নন তাদের জন্যই বিহঙ্গ দ্বীপ।নাম আর বাস্তবে যেন পুরো মিল। যেখানে বিহঙ্গের সঙ্গে বিহঙ্গের মিলন। বিহঙ্গরা উড়ে এসে জুড়ে বসে বিহঙ্গ দ্বীপে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সাগরের মাঝে বড় কোনো সবুজ পাহাড়। সাদা বালুচরের লাল কাঁকড়ার গালিচা, দূরে সাদা গাংচিল, বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। বনের মধ্যে পায়ে হাঁটা পথে কিছু দূর গেলে পাখির কলোরব আর চোখের সামনে দৌঁড় দিয়ে যাবে মায়া হরিণের পাল। এছাড়া রয়েছে কাশফুল ও বিশাল আকৃতির সৈকত। সুন্দরবন সংলগ্ন বলেশ্বর নদের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিম গোলাকার প্রায় ১৫০ একরে জেগে উঠেছে বিশাল এ চর।
দ্বীপ থেকে শোনা যায় সমুদ্রের গর্জন। আর দ্বীপের শেষ প্রান্তে পৌঁছলেই দেখা যাবে সমুদ্র। চারপাশে দাঁড়ালেই চোখে পড়বে বাংলাদেশের তটরেখায় ঢেউ খেলে যাওয়া সমুদ্রের শোভা। বিষখালী, বলেশ্বর, বঙ্গোপসাগর, পায়রা নদী সব মিলিয়ে বিহঙ্গ দ্বীপ ভ্রমণপিপাসুদের বিমোহিত করে আর মনে দেয় দেলা।
এছাড়া বিহঙ্গ দ্বীপে দেখা যাবে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকারের দৃশ্য। গোধূলি বেলায় যখন সূর্য সাগরের মাঝে ডুব দেয় তখন পশ্চিমের আকাশটা সোনালী আবাহ মেখে যায়। চরের পাশে জেলেরা জাল দিয়ে ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরেন। ইচ্ছা করলে খুব অল্প টাকায় আপনিও মাছ কিনে খেতে পারবেন।পাথরঘাটার ইউএনও হুমায়ুন কবির বলেন, বিহঙ্গ দ্বীপ পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জায়গা। অল্প সময়ে এ দ্বীপ অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উপজেলা ও জেলা প্রশাসন থেকে এরইমধ্যে দ্বীপের এক পাশে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া দুই পাশে জেটি করা হবে।
বরগুনার ডিসি মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, বিহঙ্গ দ্বীপ একটি ব্যতিক্রম পর্যটন কেন্দ্র। এটি চোখে না দেখলে বোঝার কোনো উপায় নেই। জেলা প্রশাসন থেকে সব সময় সহযোগিতা করা হচ্ছে।যেভাবে বিহঙ্গ দ্বীপে আসবেন: ঢাকার সায়েদাবাদ, গাবতলী থেকে সড়ক পথে পরিবহনে আসা যাবে। এছাড়া ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে পাথরঘাটার কাকচিড়া ঘাটে নেমে সড়ক পথে পাথরঘাটা হয়ে রুহিতা বটতলা। এরপর সেখান থেকে ট্রলারে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের পথ।
থাকার জায়গা: এখানে রয়েছে মালিকানাধীন সংকল্প ট্রাস্টের রেস্ট হাউস, সোনালী বোডিং, খান বোডিং, বরিশাল রেস্ট হাউস। ভাড়া নাগালের মধ্যেই।
Leave a Reply